জরুরী ঘোষণা :
সৃজনশীল পুস্তুক প্রকাশনায় ও বিশ্বস্ততা আমাদের মূলধন। আপনার পান্ডুলিপি পাঠাতে বুলবুল প্রকাশনীতে যোগাযোগ করুন । মোবাইলঃ 01725134446
গ্রাম এখন শহর হয়েছে

গ্রাম এখন শহর হয়েছে

গ্রাম এখন শহর হয়েছে
মোঃ বুলবুল হোসেন

অনেকদিন পর তুহিন গ্রামের বাড়ি এসেছে প্রায় দশ বছর হবে। কিন্তু গ্রামে এসে দেখল তুহিন দশ বছর আগে যা দেখেছে বর্তমানে তা আর নাই। তুহিনের গ্রামের বাড়ি তার দাদু আর দাদী থাকে। দাদু অনেক দিন পর তুহিনকে দেখে বুকে জড়িয়ে ধরল দাদুভাই কেমন আছিস। আমি ভালো আছি তোমাদের দেখতে আমি চলে আসলাম ।কতদিন হয়ে গেল তোমাকে দেখি না । মনটা কেমন জানি করছিল তোদের জন্য । চল ফ্রেশ হয়ে নিবি তারপর আমরা সবাই একসাথে খাব । তোর বাবা আগে আমাকে বলেছিল তুই আসতেছিস ।তাই পুকুর থেকে বড় মাছ ধরে রান্না করেছে তর দাদী।
ঠিক আছে দাদুভাই তুমি যাও আমি আসতেছি। এই বলে তুহিন ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে চলে আসলো ।খাবার সময় দাদুকে বললো দাদু চলো আমাদের জমিগুলো দেখে আসি। দাদু বলল এখন আর জমি দেখে কি আর মজা পাবি। এখন মানুষ খুব সৌখিন হয়ে গেছে। আগে আমাদের জমি দেখতে বিলের মাঝখানে যেতে হতো। প্রায় এক ঘন্টার মত সময় লাগতো। আর এখন বিলের মাঝখান পর্যন্ত লম্বা রাস্তা হয়ে গেছে।

মাঝে দুটা ব্রিজ হয়ে গেছে তাই আগের মতো মজা পাবি না। তুহিন বলল দাদু আগের মত মজা বলতে কি বোঝাও ? আরে দাদুভাই শোন আগে যেরকম ছিল এই এলাকা। আমার বাবা যখন জমি চাষ করত তখন অনেকগুলো লোকজন নিয়ে কাজ করতো । তাদের খাবার দিতে যেতাম গামছায় বা লুঙ্গিতে বেঁধে তারপর মাথায় তুলে হাতে পানির জগ নিয়ে চলে যেতাম। মাঝেমধ্যে আইলে কয়েকবার পড়ে যেতাম। সবাই মিলে কত মজা করে খাওয়া দাওয়া হতো। আর তখন টাকার অনেক মূল্য ছিল। মানুষ চার পাঁচ টাকা করে কামের মূল্য নিত। তা পেয়ে তাদের সংসার চলে যেত । সারাদিন গল্প আনন্দ ফুর্তিতেই কাজ মেতে থাকতো। সবাই একই আড্ডা দিয়ে কাজ করে যেত। এখন আর ওসব হয় না দাদাভাই। তখন তো মেছের এরকম ব্যবহার ছিল না। রশিতে আগুন দিয়ে এক দুপুর কেটে যেত।
যখন শ্রমিকরা কাজ শেষ করত ওই দূরে বট গাছ ছিল। তার ছায়ার তলে এসে মনের আনন্দে একেক জন গল্প করতো। এখন আরো সে সুখ নাই ।আগে রোগ বালাই কম হতো কারণ তারা কঠোর পরিশ্রম করতো।

আর এখনকার মানুষ অলস হয়ে গেছে। এসব পরিশ্রম আর করে না । বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা কমে গেছে। এতে রোগ বালাইও বেড়ে গেছে । ছোটবেলায় আমার বাবার হাতে কত মার খেতাম ।সারা দিন হই হোল্লো করে ঘুরে বেড়াতাম । একদিন তো বাবার হাতে অনেক মার খেয়েছি। কারণ ঐদিন আমি বাবার পকেট থেকে একশত টাকা চুরি করে বন্ধুদের নিয়ে ছবি দেখতে গিয়েছিলাম। আর বাবা এসে মাকে জিজ্ঞাসা করছিল আমার পকেট থেকে কে টাকা নিয়েছে। তখন আমার মা বলল তুমি কোথাও ফেলে এসেছ। বাবা বলল অবশ্যই তোমার ছেলে নিয়েছে। তাছাড়া টাকা যাবে কই। বাবা মা ঝগড়া করতে করতে রাত্রি পায় দুইটা বেজে গেছে। এদিকে বাবা-মার ঝগড়া চলতেছে। তাই বাড়িতে আসার সাথে সাথে বাবা আমাকে গরু পিটানো লাঠি দিয়ে অনেক মেরেছিল। দুই দিন হাসপাতালে ছিলাম। বাবা অনেক কেঁদেছিল আমাকে মারার পর। তখন এরকম কারেন্ট ছিল না,কেরোসিন তেল দিয়ে হ্যারিকেন জ্বালানো হতো ।বাড়িতে পুথি পড়া হতো । জোৎস্না রাতে উঠানে বসে থাকা হতো। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে চোখে জল এসে যায়। দাদুভাই গ্রাম এখনো গ্রামের মতো আছে । কিন্তু আগের দিনগুলো নেই গ্রাম এখন শহর হয়ে গেছে। শহরের মানুষ গুলোর মত গ্রামের মানুষ গুলো ইট পাথরের পরিণত হয়ে যাচ্ছে । কেউ কারো ধার ধারে না সম্মান করে না। আগে ভালো একটা কাজ করলে দশজনের মতামত নিতো। এখন আর তা হয় না।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © ২০২৪ BanglarKobi.com
Desing & Developed BY LIONBD.COM